ভোলা সদর হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ওবায়দুল এর খুঁটির জোড় কোথায়?
এম এন আলম।
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় হিসেবে ভর্তি হওয়া ওবায়দুল এখন ওটি অপারেশন থিয়েটারের বড় ডাক্তার। নানান অনিয়ম অপকর্মের মধ্য দিয়ে সাধারণ রোগীদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। একই হাসপাতালে দীর্ঘ ২৯ বছর কর্মরত থাকা ওবায়দুলের রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার, অপারেশন বাণিজ্য সহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন- ওবায়দুল হাসপাতলে ওটিতে সকল ধরনের অপারেশন ও সেলাই করে থাকেন,বিশেষ করে মহিলাদের ব্রেস্ট অপারেশনের সেলাইটি ও এই ওবায়দুল করে থাকেন।যাহা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। হাসপাতলে আসা অপারেশনের জন্য রোগীদের বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে থাকেন, এবং তার থেকে অর্থ হাতিয়ে নেন। যার মধ্যে এপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের রোগীর সংখ্যাই বেশি।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর অপারেশনের জন্য আসা রোগীদের নানা ছলছতুরি বুঝিয়ে হাসপাতালে অপারেশন না করিয়ে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানোই ওবায়দুলের কাজ।
ভুক্তভোগী আনোয়ার (অটোচালক)বলেন- আমি আমার মায়ের পায়ের ইনফেকশন এর জন্য হাসপাতালে যাই, পরবর্তীতে ডাক্তার সবুজ কুমার পাত্র আমাকে অপারেশনের কথা বলেন। অপারেশনের পর তখন ওটিতে থাকা জুয়েল এর মাধ্যমে ব্যাগ মেশিন দেন ওবায়দুল এবং ডাক্তার সবুজ কুমার পাত্র,এই ব্যাগ মেশিনের ভাড়ার আমার থেকে ১৬ হাজার টাকা নেন । ব্যাগ মেশিন ব্যবহারের ফলে আমার মায়ের পায়ের ইনফেকশন এর অবস্থা গুরুতর আকার ধারণ করলে আমার মাকে একপর্যায়ে জোর করে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ডাক্তার সবুজ কুমার পাত্র ও ওটির ওবায়দুল রা হাসপাতাল থেকে বের করে দেন,এবং বলেন তোমার মায়ের কিছু হলে আমরা জানি না, আমাকে বলে তোমার মাকে ঢাকা-চট্টগ্রাম বা যেকোনো জায়গায় নিয়ে যাও, তখন আমি নিরুপায় হয়ে মাকে ঢাকায় নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তাররা আমার মায়ের পায়ের অবস্থা খারাপ দেখে ব্যাগ মেশিন সম্পর্কে জানতে পেরে আমাকে বকাঝকা করেন। এবং এই মেশিনের কারণেই মায়ের অবস্থা খুব খারাপ হয়েছে বলে ডাক্তাররা জানান । পূর্বে ডাক্তার সবুজ কুমার পাত্র এবং ওটিতে থাকা অন্যান্য সদস্যবৃন্দরা আমার সাথে খারাপ আচরণ করে বলে আমি যেন রোগী ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম নিয়ে যাই। তারা আমার থেকে টাকা খেয়ে অপারেশনের নামে এরূপ কাজ করেছে। আর তাদের ব্যবহৃত ব্যাগ মেশিনটিতে আমার মায়ের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে এবং আমার অনেক অর্থ গিয়েছে। প্রতিদিন তাদেরকে পাঁচশত টাকা করে দেওয়া লাগতো মেশিনের জন্য।
ভুক্তভোগী অটো চালকের দাবি ক্ষতিকর ব্যাগ মেশিনটি ওবায়দুলের।
ইনফেকশনের জন্য ব্যবহৃত এই ব্যাগ মেশিনটি সম্পর্কে ডাক্তার সবুজ কুমার পাত্র বলেন- ঢাকার বড় বড় হাসপাতালে এটার বিকল্প মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে তবে সেগুলো এটির চেয়ে ব্যয়বহুল আর কাজ একই।
শুধু তাই নয়,সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ৬ নং বেডে থাকা জামিলা(১৪) দীর্ঘ ২১ দিন অপারেশনের পরও অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা নিয়ে এখনো হাসপাতালে ভর্তি। এই অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর অপারেশনটিও ওবায়দুল(ওয়ার্ড বয়) এর মাধ্যমে হয়েছে বলে স্বজনরা অভিযোগ করছেন।
রিকশাচালক জামিলার বাবা অভিযোগ করে বলেন- জামিলা পেটের ব্যথা নিয়ে ভোলা সদর হাসপাতালে আসলে ডাক্তার সবুজ কুমার পাত্র তাকে অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর অপারেশনের জন্য পরামর্শ দেন। সদর হাসপাতালে সেই অপারেশনের হওয়ার কথা থাকলেও ওবায়দুল এসে তাদেরকে পরামর্শ দেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপারেশন করার। অপারেশনের ২১ দিন পার হলেও এখনো জামিলার ব্যথা কমেনি বলে দাবি তার।
এরকম একাধিক ব্যক্তি ওবায়দুল কর্তৃক হয়রানি হয়ে সাংবাদিককে অভিযোগ দেন এবং তার খুটির জোর কোথায় জানতে চান।
তবে ওবায়দুল এর সাথে কথা বললে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি এবং ইনফেকশনের জন্য ব্যবহৃত ব্যাগ মেশিনটি তার নয় বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা:মু.মনিরুল ইসলাম বলেন ওবায়দুলের বিরুদ্ধে এরকম অনেক অভিযোগ ছিল আমরা বিভিন্ন দিক বিচার- বিশ্লেষণ করে তাকে আবার দায়িত্বে দিয়েছি। এখন যদি তার বিরুদ্ধে এরূপ অভিযোগগুলো আবারো উঠে আসে,তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।