ভোলার মদনপুরে চরদখলের অভিযোগে নান্নু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
স্টাফ রিপোর্টার!!
ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের চর বৈরাগিয়ায় ভূমিদস্যু নাছির উদ্দিন নান্নু চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে চর বৈরাগীয়া শিকস্তী ভূমি মালিক সমিতি মানববন্ধন করেছে।
মঙ্গলবার (২০ডিসেম্বর) দূপুরে চর বৈরাগিয়ায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মানববন্ধনে চর বৈরাগিয়ার জমির প্রকৃত মালিকরা অংশগ্রহণ করেন। এ সময় মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী জমির মালিকরা অভিযোগ করে বলেন, চাঁদাবাজ ও জাল দলিলকারী চক্র,সন্ত্রাসী, মামলাবাজ মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন নান্নু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দীর্ঘদিন যাবত জোরপূর্বক আমাদের মালিকানা জমি দখল করে আছে। আমাদের জমিতে আমাদের চাষাবাদ করতে দিচ্ছে না।
এছাড়াও মানববন্ধনের লিখিত অভিযোগে চর বৈরাগীয়া শিকস্তী ভূমি মালিক সমিতির সদস্য মাহামুদুল হক বলেন, দৌলতখান উপজেলাধীন মদনপুর ইউনিয়নের চর বৈরাগিয়া মৌজার প্রায় ৪১০০ একর নাল জমি আমি সহ আরো অনেক লোকজন রেকর্ডীয় মালিক নিযুক্ত আছি। তাহাতে উক্ত জমি বর্তমানে নতুন চর জাগিয়াছে দেখিয়া নাছির উদ্দিন নান্নু চেয়ারম্যান ও তার পালিত সন্ত্রাসী বেলায়েত এর লোভের কারণ জন্মে। নান্নু উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাহারা জনবলে ও অর্থবলে বলিয়ান বিধায় আমাদের উক্ত রেকর্ডীয় জমি দীর্ঘ দিন যাবৎ জোর পূর্বক ভোগ দখল করার পায়তারা করছে। আমাদের রেকর্ডীয় জমি হইতে আমাদের বাসস্থান দূরবর্তী হওয়ায় এবং তাদের নিকটবর্তী হওয়ায় তাহাদের প্রভাবে আমরা আমাদের জমিতে বর্তমানে ফসলাদি রোপন করতে পারি না। আমরা সকল রেকর্ডীয় মালিকগণ ফসলাদি রোপন করিতে গেলে বিবাদীগণ সর্দার, লাঠিয়াল, সন্ত্রাসী ও জলদস্যু প্রকৃতির লোক নিয়ে এসে আমাদের কে বাধা প্রদান করে। এছাড়াও আমাদেরকে হুমকি দিয়া বলে যে, আমরা যদি আমাদের রেকর্ডীয় জমিতে ফসলাদি রোপন করিতে যাই তবে আমাদেরকে খুন করিবে, আমাদেরকে হত্যা করিয়া আমাদের লাশ বস্তায় ভরিয়া মেঘনা নদীতে ভাসাইয়া দিবে, আমাদের বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা দিয়া হয়রানী করিবে। উক্ত বিষয় নিয়া আমরা কোথাও কোন অভিযোগ দিলে বা বিচার প্রার্থী হইলে আমাদের কে চরম শিক্ষা দিবে বলিয়া ভয়ভীতি প্রদর্শন করিয়াছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা অত্যন্ত গরীব ও অসহায় লোক। ভূমিদস্যু নান্নু চেয়ারম্যান এর ভয়ে বর্তমানে আমরা ভীত সন্ত্রস্ত্র হইয়া পড়িয়াছি। আমরা আমাদের রেকর্ডীয় জমিতে ফসালাদি রোপন করিতে গেলে বেলায়েত গং বিল্লাল মাঝি ও রশিদ গং দ্বারা আমাদের জান ও মালের ক্ষতির সম্ভাবনা রহিয়াছে। এমতাবস্থায়, আমরা যা,তে আমাদের রেকর্ডীয় জমিতে ফসলাদি রোপন করিতে পারি তার জন্য আপনার নিকট আকুল আবেদন করিতেছি। তারা ভোলার জেলা প্রশাসক কাছেও উপরোক্ত উল্লেখিত কারনে আইনী সহায়তা সহ তাদের রেকর্ডীয় জমি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ দাবী জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়। এছাড়াও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, আলাউদ্দিন তালুকদার (৩৫), তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা ১৫ গন্ডা জমির মালিক অথচ নান্নু চেয়ারম্যান ও বেলায়েত আমাকে কোন জমি চাষ করতে দিচ্ছে না। পেটের দায় বাধ্য হয়ে বেলায়েত কে ৬০০০ হাজার টাকা দিয়ে ৪ একর জমি চাষ করেছি। ভুক্তভোগী আব্দুল হক ফরাজী (৭৫) বলেন, এ চরে আমাদের ১০ কানি জমির রয়েছে, অথচ এই ভূমিদস্যু নান্নু চেয়ারম্যানে বেলায়াত বাহিনী দিয়ে চরে এরকম সন্ত্রাস কায়েম করেছে যে আমি ১ গন্ডা জমিও চাষ করতে পারছি না।
আরেক ভুক্তভোগী মামুন (৩০) অভিযোগ করে বলেন, নান্নু চেয়ারম্যান ও বেলায়েত আমাকে ১০ একর জমি দিবে বলিয়া ৩ লক্ষ টাকা নেয়, অথচ আজ পর্যন্ত আমাকে কোন জমি তো দেয়নি আমার টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। এছাড়াও আমার ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল বেলায়েত ৬০ হাজার টাকা দাম করিয়া নিয়ে যায়। মোটরসাইকেলের টাকা ও জমি বাবদ নেওয়া ৩ লক্ষ টাকা আজ পর্যন্ত আমাকে বুঝিয়ে দেয়নি। আমি টাকা চাইতে গেলে সন্ত্রাসী বেলায়েত আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
এছাড়াও নাসির উদ্দিন নান্নুর চেয়ারম্যান, বেলায়েত ও সিরাজ কসাই এর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে চর বৈরাগিয়ায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর দেওয়ার নাম করিয়া প্রত্যেক সুবিধাবী থেকে ৩ হাজার, ৪ হাজার, ৫ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী রাবেয়া বেগম (৩০) বলেন বেলায়েত আমার কাছ থেকে এ ঘরের জন্য ৩ হাজার টাকা নেয়। একই অভিযোগ করে কবির হোসেন বলেন একটি ঘরের জন্য আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া লাগছে। দুলাল হাওলাদার (৫১) বলেন ২টি ঘরের জন্য আমার কাছ থেকে বেলায়েত ১৫ হাজার টাকা নেয়। অভিযোগ রয়েছে সিরাজ কসাই আবাসনের ১০টি ঘর দখল করে আছে। উক্ত ঘর গুলোতে গরু, ছাগল রাখেন সে। একইভাবে বেলায়েত ও তার আত্মীয়স্বজনরা আবাসনের ঘর গুলো দখল করে রেখেছে।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত মদনপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাছিরউদ্দিন নান্নু,বেলায়েত হোসেনসহ অন্যান্যদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এসব ঘটনার সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন।