ভোলায় ইউপি সচিবদের বদলি আতঙ্ক, একযোগে ৪১ সচিব কে বদলির আদেশ
আশিকুর রহমান শান্ত
ভোলা প্রতিনিধি
ভোলায় ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের (সচিব) মধ্যে চলছে চাপা উত্তেজনা। জেলার ৭২ ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের মধ্যে বদলি আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে একযোগে জেলার ৪১ সচিবকে বদলির আদেশ হয়েছে। এই আদেশের পরপরই ইউপি সচিবদের মধ্যে বদলি আতঙ্ক পেয়ে বসে এবং তাদের ভিতর অস্থিরতা শুরু হয়। ফলে সচিবদের এই অস্থিরতার প্রভাব পড়ছে তাদের অধীনস্ত ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন পরিসেবার দায়িত্বে থাকা স্টাফদের উপরও। সামগ্রিকভাবে ইউনিয়ন পরিষদের কাজের গতি কমেছে। কাজেকর্মে মন নেই অনেকের। কেউ কেউ নতুন কর্মস্থলে এসে সরকারের নির্ধারিত টার্গেট পূরণের জন্য অবৈধ পন্থাও অবলম্বন করছে।
গত ৩০ অক্টোবর বুধবার ভোলা জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত এক আদেশে পরদিন বৃহস্পতিবার স্ব-স্ব কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হয়ে রবিবার দুপুর ১২টার মধ্যে বদলি হওয়া ইউপি সচিবদের নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক মো. আজাদ হাজান। এবারই প্রথম জেলার ৭২ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৪১ জনকে জেলার মধ্যে বদলি করা হয়।
চরখলিফা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ আবু জাফর বলেন, এই বদলির আদেশে অবশ্যই আমাদের ভিতর আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত তিন মাস আগে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হওয়ার পর এ ৩ মাসে যে যে ইউনিয়নে ছিলাম সেই ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও মেম্বার এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানদের নিয়ে অনেক কিছু কন্ট্রলে নিয়ে স্বাভাবিক করেছি। এখন ভিন্ন একটি নতুন জায়গায় যদি আমরা যাই তাহলে সেখানে তাদের সাথে মিশতে ও ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে কয়েক মাস সময় লেগে যাবে।
বদলির বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে বদলি হওয়া মোঃ আলাউদ্দিন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এক একজন একটি জায়গায় দীর্ঘ ১০/১৫ বছর ধরে আছি। সেখানের সব কিছু সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে। এখন নতুন একটি জায়গায় গিয়ে বুঝতে বুঝতে ও ৬ মাস সময় লাগবে।
চরসামাইয়া ইউনিয়নের সচিব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, বদলির বিষয়ে আমাদের বিতরে কোন আতঙ্ক নেই। সরকারি চাকরি বদলি তো হতেই হবে। সরকার যখন যেখানে বদলি করবেন তখন সেখানেই আমরা কাজে যোগদান করব। এতে আমাদের কোন সমস্যা নেই।
দীর্ঘ সময় পর সচিবদের বদলির আদেশের বিষয়ে ভোলা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল হক অনু’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দূর শাসনের আমলে দেশের অবস্থা কতটা খারাপ ছিল তার প্রমাণ হলো ইউনিয়ন পরিষদের সচিবরা। এই সচিবরাও রাজনৈতিক বিবেচনায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে জোকসাজোস করে যাতে তারা দুর্নীতি করতে পারে এই লক্ষে দীর্ঘদিন যার যার পছন্দের ইউনিয়নে ছিলো। যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রায় তিন মাস পর এদেরকে বদলি করা হয়েছে। আরো তিন মাস আগে এদেরকে বদলি করা উচিত ছিল। একজন চেয়ারম্যান যদি দুর্নীতি করে এরাও সেই দুর্নীতির অংশীদার। এদের বিষয়ে সঠিকভাবে তদন্ত করলে দেখা যাবে সকল সচিবরা কোন না কোন চেয়ারম্যানের দুর্নীতির অংশ বা দোসর। তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
শিক্ষক নুরনবী মনির বলেন, বিধান অনুযায়ী সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী একই কর্মস্থলে তিন বছরের অধিক সময় থাকতে পারেন না। কিন্তু সচিবদের বেলায় নিয়মটি কার্যকর হচ্ছিল না। অনেকেই ৫ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত একই কর্মস্থলে ছিলো। যার ফলশ্রুতিতে ইউনিয়ন কেন্দ্রিক বিভিন্ন দুর্নীতির সাথে সচিবরা জড়িত হয়ে পড়েন। দীর্ঘ সময় পরে হলেও এ ধরনের বদলির আদেশে সাধারণ জনগণের ভিতরে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসবে এবং ইউনিয়ন ভিত্তিক দুর্নীতি গুলো কমে আসবে।
বদলি হওয়া ৪১ ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা (সচিব) হলেন, ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কে চরসামাইয়া ইউনিয়ন পরিষদে, পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ নোমান কে লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়ন পরিষদে, চরসামাইয়া ইউনিয়নের মোঃ আলাউদ্দিন কে রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদে, কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের আবু জাফর কে দৌলতখান উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়ন পরিষদে, ধনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ ফারুক কে দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদে, উত্তর দিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ রিয়াজ উদ্দিন কে শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদে, দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ শরিফুল ইসলাম কে ভেদুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে, শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ রিয়াজ উদ্দিন কে দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদে, ভেদুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ নিয়াজ মোর্শেদ কে দৌলতখান উপজেলার উত্তর জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদে, ভেলুমিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ ফরহাদ হোসেন কে উত্তর দিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদে, আলীনগর ইউনিয়নের শ্যামল চন্দ্র দে কে লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদে, দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ আলমগীর হোসেন কে মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদে, মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের এ.কে.এম হাসিবুশ শাহীদ কে ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদে, উত্তর জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের মোহাম্মদ ইব্রাহিম কে ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদে, দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ রমজান আলী কে বোরহানউদ্দিন উপজেলার গংগাপুর ইউনিয়ন পরিষদে, চরখলিফা ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ হাসান কে বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়ন পরিষদে, সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের আব্দুর রহমান কে ধনিয়া ইউনিয়ন পরিষদে, বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকা ইউনিয়ন পরিষদের শাহাদাত হোসেন কে পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন পরিষদে, টবগী ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ কালিমুল্লাহ কে বড়মানিকা ইউনিয়ন পরিষদে, কুতুবা ইউনিয়ন পরিষদের আব্দুল বারেক কে লালমোহন উপজেলার ফরাজগঞ ইউনিয়ন পরিষদে, গংগাপুর ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ হোসেন কে লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়ন পরিষদে, লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ সিদ্দিকুর রহমান কে মনপুরা উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এবং কলাতলী ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করবেন। লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ মিজানুর রহমান কে ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদে, ফরাজগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ মোকাম্মেল হক কে বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়ন পরিষদে, পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ ইলান হোসেন কে রমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদে, রমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ নিরব হোসাইন কে চরফ্যাশন উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে আহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করবেন। তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের আব্দুল করিম কে সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদে, সম্ভুপুর ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ মেজবাহউদ্দিন কে চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদে, সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ নুরে আলম কে সম্ভুপুর ইউনিয়ন পরিষদে বদলি করা হয়। চরফ্যাশন উপজেলার এওয়াজপুর ও হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ মাযহারুল ইসলাম কে ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়ন পরিষদে, ওসমানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের হাসনাইন মোঃ নুরুল্লাহ কে মুজিব নগর ইউনিয়ন পরিষদে, মুজিব নগর ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ জহির উদ্দিন কে ওসমানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদে নুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের বশিরুল ইসলাম কে চরউমেদ ইউনিয়ন পরিষদে, অধ্যক্ষ নজরুল নগর ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ ইয়ামিন কে চরকলমী ইউনিয়ন পরিষদে চরকলমী ইউনিয়ন পরিষদের আব্দুল আজিজ কে অধ্যক্ষ নজরুল নগর ইউনিয়ন পরিষদে, আহাম্মদপুর ও আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ জামাল হোসেন কে এওয়াজপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব দেয়া হয়। রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের আব্দুল কাদের আজম শাহ কে নুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে, কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ অহিদুর রহমান কে জিন্নাগড় ইউনিয়ন পরিষদ ও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে চরমাদ্রাজ ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করবেন। চরমাদ্রাজ ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ আলম কে আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদে বদলি আদেশ দেন। মনপুরা উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের রুমন চন্দ্র দে কে দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদে, মনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের মোঃ ইয়াজ উদ্দিন কে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে হাজির হাট ইউনিয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।