জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ নয়
হাইকোর্টের রুল
বিশেষ প্রতিবেদন :-
জ্বালানির তেলের (ডিজেল, পেট্রল ও অকটেন) দাম বৃদ্ধি করে সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং ওই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার-বাতিল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে করা একটি রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ এ রুল দেন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে
গত শুক্রবার ৫ আগস্ট রাতে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাত ১২টার পর থেকে ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা মূল্য (১ লিটার) ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা এবং পেট্রল ১৩০ টাকা হবে। এতদিন কেরোসিন ও ডিজেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা এবং পেট্রল ৮৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
পরে গত ৬ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সমন্বয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসান কমানোসহ পাচার হওয়ার শঙ্কা থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এরপর ৭ আগস্ট যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। ‘জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির’ ওই প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৮ আগস্ট রিট করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দ। রিটের ওপর ১৪ আগস্ট শুনানি হয়। সেদিন শুনানি নিয়ে ১৬ আগস্ট দুপুরে শুনানির জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল শুনানি হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পেট্রোলিয়ামের দাম নির্ধারণ নিয়ে ক্যাবের পক্ষে একাধিক রিট করেছেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়–য়া, তিনিও শুনানিতে অংশ নেন। ইউনুছ আলী আকন্দ শুনানিতে বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইনের বিধান লঙ্ঘিত হয়েছে। আইনে আছে গণশুনানি করতে হবে, মূল্য নির্ধারণ করবে বিইআরসি। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণশুনানি হয়নি। সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে দাম নির্ধারণ করেছে।
আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়–য়া বলেন, গণশুনানি ছাড়া দাম নির্ধারণের সুযোগ নেই। এখানে মন্ত্রণালয়ের দাম নির্ধারণ করার এখতিয়ার নেই। এ দাম নির্ধারণে বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করেছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের বিধি অনুমোদিত হয়নি। যে কারণে আইনের বিধান অনুসারে কমিশনের এখানে গণশুনানির সুযোগ নেই। জ্বালানি তেলের দাম পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। অতীতেও একইভাবে জ্বালানি তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।