খেলনা বিমান বানাতে বানাতে সত্তিকারের বিমান বানাবেন একদিন সেই স্বপ্ন আশিবের সেই বিমানে দেশ সফর করবেন।

0
2

দৈনিক ভোলা সময় নিউজ।

নিউজ ডেস্ক,
খেলনা বিমান বানাতে বানাতেই সত্যিকারের বিমান বানাবেন একদিন, সেই স্বপ্ন আশিরের।

আশিরের তৈরি খেলনা বিমানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ বিমানের ড্রিমলাইনার বোয়িং-৭৮৭, ফাইটার বিমান মিগ-২৯, চেসনা ও ইউএস বাংলার বিমানের মডেল। এর মধ্যে তিন কিলোগ্রাম ওজনের বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনারটি ঘণ্টায় ২৫০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে সক্ষম বলে দাবি তার।

বিমান উড়তে দেখে তাতে চড়ার সাধ তো অনেকেরই জাগে, কিন্তু সাধ মেটাতে নিজেই বিমান বানিয়ে তাতে উঠবেন বলে স্বপ্ন দেখছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর আশির উদ্দিনের। বিমান বানাতে বাড়িতে ছোটখাটো একটা ল্যাবরেটরিও গড়ে তুলেছেন এই যুবক।

বাঁশখালীর পুইছড়ি ইউনিয়নে বাড়ি আশিরের। ২০১৭ সাল থেকে তিনি বানিয়ে আসছেন খেলনা বিমান, যেগুলো কিছুদূর উড়তে সক্ষম।

আশিরের ওই ল্যাবে গিয়ে দেখা গেল বাংলাদেশ বিমানের ড্রিমলাইনার বোয়িং-৭৮৭, ফাইটার বিমান মিগ-২৯, চেসনা ও ইউএস বাংলার বিমানের আদলে বানানো ১২টির মতো খেলনা বিমান।

এর মধ্যে তিন কিলোগ্রাম ওজনের বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনারটি ঘণ্টায় ২৫০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে সক্ষম বলে দাবি আশিরের।

বিমান বানাতে বানাতে তার মাথায় এলো ওয়াটার বোট তৈরির বুদ্ধি। বানিয়েও ফেললেন একটি। জ্বালানি নয়, বাতাসের শক্তিতে চলে সেটি।

এসবের পাশাপাশি একটি ড্রোনও তৈরি করেছেন আশির। সেটি দুর্গম বা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ছবি তুলতে ও ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক ছিটাতে কাজে আসবে বলে জানান তিনি।

আশির নিউজফেস বিডিকে জানিয়েছেন , কীভাবে এসব তৈরির সরঞ্জাম তিনি জোগার করেছেন।

তিনি বলেন, ‘বাঁশখালীর প্রত্যন্ত গ্রামে বসে বিমানের মডেল তৈরির প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করতে হয়েছে অনেক কষ্টে। ঢাকায় থাকা আত্মীয়রা বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কিনে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তা পাঠানো হতো বাড়ি থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরের গুনাগরি বাজারে। সেই বাজার থেকে যন্ত্রাংশগুলো সংগ্রহ করতাম।

‘কলেজে পড়ার সময় বন্ধুরা যখন মাঠে খেলত, তখন আমি আমার ছোট্ট ল্যাবে সময় কাটাতাম নানা যন্ত্রাংশের সঙ্গে। অবসরের পুরো সময়টা ল্যাবেই দিয়েছি।’

খেলনা বিমান তৈরির কীভাবে শুরু করেন?

আশির বলেন, ‘আমি কোনো মডেল তৈরি করব ঠিক করলে আগে কাগজে তার একটা স্কেচ আঁকি, তারপর সেটা নিয়ে কাজ শুরু করি। স্কেচ অনুযায়ী যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে তা সংযোজনের উপযোগি করি। তারপর প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রি্ক্যাল কাজ শেষ করে আটা বা গাম দিয়ে লাগিয়ে তার একটা শেপ দেয়ার চেষ্টা করি।

‘এখন বিমানগুলো আকাশে উড়ছে। মানুষ দেখে খুশি হয়। একটা সময় ছিল অনেকে হাসাহাসি করত। আমার অনেকগুলো বিমান উড়ানোর আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কিছু তৈরি করতে চাইলে আর নষ্ট হয় না।’

এসব কাজের জন্য খরচাপাতি দিতে মা-বাবা কখনও পিছপা হননি বলে জানান এই তরুণ।

তিনি বলেন, ‘আমার তো বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনার জন্য টাকা লাগত। টাকা বাবাই দিতেন মূলত। মা-বাবাসহ পরিবারের সবাই সবসময় আমার পাশে ছিলেন। তারা নানাভাবে আমাকে অনুপ্রেরণা দিতেন। আমি যা চাইতাম তাই করতে দিতেন। তবে এখন ফেসবুক ও ইউটিউবে আমার অ্যাকাউন্ট আছে। ব্লগিং করে টাকা পাই। সেই টাকা দিয়েই মোটামুটি চলে এখন।’

আশির মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন স্থানীয় স্কুল ও কলেজে। এখন চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছেন তিনি।

আশিরের বাবা লবণ ব্যবসায়ী মো. শাহাবুদ্দিন নিউজ ফেস বিডি বলেন, ‘আশির ছোট থেকেই বাইরে অন্য কাজ না করে বাসায় বসে এসব মেকানিক্যাল কাজগুলো করত। আমরা চাই ও যথাযথ সুযোগ-সুবিধা পাক এবং ওর মেধাটা দেশের কাজে লাগাক। ওর মেধাটারও মূল্যায়ন হোক।’

এলাকার তরুণ সংগঠক এম এইচ আর শাকের উল্লাহ সাগর আশিরের এই কাজগুলো কাছ থেকে দেখেন সবসময়।

তিনি বলেন, ‘আশির যে বিমান তৈরি করতেছে এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। আমি পুইছড়িবাসীর পক্ষ থেকে তাকে দোয়া ও শুভকামনা জানাচ্ছি। সরকার যদি তাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে গড়ে তোলে, তাহলে আমি মনে করি সে দেশের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখতে পারবে।’

পূর্ববর্তী খবরবরগুনা সদর উপজেলার বাবুগঞ্জে গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা। অভিযুক্ত শহীদ বিশ্বাস
পরবর্তী খবরজীবন বদলে দেওয়া ছোট ছোট আমল।