দৈনিক ভোলা সময় নিউজ।
অন্যের বাড়ীতে দুঃখে কষ্টে দিনাতিপাত করছে
শিক্ষিত চাকুরীজীবী দুই ছেলের মা আলেয়া(৭৫)
ইত্তিজা হাসান মনির, জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
মা ছোট একটি শব্দ, মা শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সকল মায়া। নদীর তলদেশ পরিমাপ করা যায় কিন্তু মায়ের ভালবাসার গভীরতা পরিমাপ করা যায় না। সৃষ্টিকর্তা বলেছেন আমি যদি আমার পরে কাউকে সিজদা করতে বলতাম তাহলে সেটা হত মা। অন্য একটি বর্ননায় আছে মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের স্বর্গ। একটি পরিবার তখনই সম্পূর্ন হয় যখন পরিবারটিকে মা আগলে রাখে। একমাত্র মায়ের ভালবাসাই পৃথিবীতে ফ্রিতে পাওয়া যায়। এক কবি লিখেছেন দেখিলে মায়ের মুখ মুছে যায় সব দুঃখ সৃষ্টির জগতে মা শব্দটি নিয়ে যত কবিতা, গান, ভালবাসার সৃষ্টি হয়েছে অন্য কোন শব্দ নিয়ে এত কিছু হয়নি। মা শব্দটি মুখে বলতে যতটি মানুষ আত্বতৃপ্তি পায় অন্য কোন ভাষায় পায়না। এরকম হাজারো বানী তৈরী হয়েছে মা শব্দটি নিয়ে।
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার। বুকের ব্যাথা বুকে চাঁপিয়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।
এই মাকে ই বরগুনা সদর উপজেলা আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের হোমিও চিকিৎসক মৃত্যু মোজাফফর হাওলাদারের শিক্ষত বড় ছেলে মনিরুজ্জামান জুয়েল এবং ছোট ছেলে কামরুজ্জামান শোয়েব গর্ভধারিনী মাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে আঠারো(১৮) মাস আগে। রমজানের ঈদ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মা আলেয়া বেগমকে ঘরে তুলে নেয়নি এই চাকরী জীবী সন্তানেরা,বেশ কয়েকবার মা ঘরে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করলেও বড় ছেলে জুয়েল এবং স্ত্রী অনিতা বেগম আঙ্গুরী ঘর থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। এবং মাডাম দিয়ে পিটিয়ে সামনের দুটি দাঁত ভেঁঙ্গে ফেলে।
পহেলা অক্টোবর ২১ ইং সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল দুই ছেলে জুয়েল এবং শোয়েবের মা আলেয়া বেগম (৭৫) প্রতিবেশী ইদ্রিসের বাড়িতে মেয়ে ফেরদৌসীকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে। কত ব্যাথ্যা বুকে চাপালে তাকে বলি আমি ধর্য্য। আমার হৃদয়ের কম্পনের সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদেরকে ধিক্কার জানাতে হয়েছে। আলেয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন আমার ছেলে দুটিকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছি। শিক্ষিত করেছি ওরা ঢাকা এবং চট্টগ্রামে চাকরি করে, আমি কি অন্যায় করেছি আজ আমাকে অন্যের বাড়িতে থাকতে হয়। ওর বাবা আঠারো(১৮) মাস আগে মনে অনেক কষ্ট নিয়ে মারা গিয়েছে। এই আঠারো(১৮) মাস থেকেই আমি অন্যের বাড়ীতে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা মোঃ ইদ্রিসের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার আগে অন্য একটি বাড়িতে ছিলাম সে বাড়িতেও আমার ছেলেরা তাদেরকে গালিগালাজ করে আমাকে বের করে দিতে বলেছে। আমার স্বামীর রেখে যাওয়া জমিজমা এক সময় আমি ভোগ করতাম সে জমিজমাও অন্যের কাছে রেখে দিয়ে টাকা নিয়ে গিয়েছে। আমি এখন কি খাব কোথায় থাকবো, আমার বাড়িতে টিনশেড বিল্ডিং আমি বাড়ি করতে অনেক কষ্ট করেছি কিন্তু আজ আমার অন্যের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। আমার প্রতি ওদের কেন মায়া দয়া হয়না? জানিনা আমি কি অন্যায় করেছি এরকম সন্তান আর যেন কারো না হয়।
আমার প্রতি কেন ওদের দয়া হয়না। আমার বড় ছেলে জুয়েল (৫০)অনিতা বেগম আঙ্গুরী নামের একটি মেয়েকে বিবাহ করেছে। আলিফ(১৪) গালিব (৫) বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। আমার মেয়ে ফেরদৌসীর বিবাহ নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল সে থেকেই আমাকে আমার ঘর থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। আলিফ ও তার মা বাবার সাথে মারপিটে অংশ নেয়। আমার বয়স্ক মেয়ে তার পছন্দমতো বিয়ে করতে পারবে এটা তো স্বাভাবিক। সে থেকেই আমাকে ঘরে উঠতে দেয় না খাবার দেয় না।
বরগুনার পুলিশ সুপার মুহম্মদ জাহাঙ্গির মল্লিক সদর থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম তারিকুল ইসলাম আমার বাড়িতে বেশ কয়েকবার খাবার দিয়ে গিয়েছে। তারা আমার ছেলেদের সাথে ফোনে কথা বলেছে মৌখিক ভাবে খাবার দিতে বলেছে, তারপরও তারা আমাকে খাবার দিচ্ছে না আমাকে ঘরে উঠতে দিচ্ছে না। আমি কতদিন এভাবে অন্যের বাড়িতে থাকব। আমার বড় ছেলে ছেলের বউ এবং বড় নাতি আলিফ আমাকে মারধর করে আমার সামনের দাঁত ভেঙ্গে দিয়েছে। আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের নামে একটি মামলা করে ছিলাম সেই মামলায় আমার ছেলের বউ চারদিন হাজতে ছিল।
শুনেছি তখন আমার দুটি নাতি নিয়ে বরগুনার টাউন হলের সামনে মানববন্ধন করেছে। সেখানে বলা হয়েছিল ওদের মা জেলে আমি নাতিদের দেখা শুনা করিনা। আমি কি ভাবে দেখা শুনা করব? আমি তখন অসুস্থ্য। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আমাকে খাবার ব্যবস্থা করে দিন আমার থাকার ব্যবস্থা করেদিন।
অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আঃ লতিফ মাষ্টার বলেন এ রকম জঘন্য কাজ কোন ছেলেরা করতে পারেনা জুয়েল এবং সোয়েব লেখা পড়া ছেলে হয়েও নিজের মাকে কিভাবে মারধর করে বাড়ী থেকে বের করে দেয় এদের বিচার হওয়া উচিৎ।
একই বাড়ীর আইউব আলী হাওলাদার গ্রাম্য চিকিৎসক বলেন,বয়স্কো বোন নিজের ইচ্ছামত বিবাহ বসেছে তাতে মায়ের প্রতি কেন এত ক্ষোভ মাকে কেন বাড়ী থেকে মারধর করে বের করে দিতে হবে?
একশত বছর বয়সের দাদী হাজেরা খাতুন বলেন, জুয়েল এবং সোয়েব তার মা আলেয়া বেগমকে এক কাপড়ে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে বর্তমানে খাবার দেয়না, মায়ের খোঁজ খবর রাখেনা।
ফজিলাতুন নেছা (৯৫) বলেন জুয়েল এবং সোয়েব ওর মাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে আঠারো মাস পর্যন্ত খাবার দেয়না।
বর্তমানে আশ্রয়দাতা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মোঃ ইদ্রিস বলেন, জুয়েল এবং সোয়েবের অনেক সম্পদ ভাল চাকরী করে নিজেরা বাড়ীতে ওয়ালসেট বিল্ডিং করেছে এখন তো তাদের সুখের থাকার কথা কিন্তু দুঃখের বিষয় জুয়েল এবং সোয়েবের মা এদের আমার বাড়ীতে থাকতে হয়।
কদমতলা বাজার কমিটির সভাপতি মোঃ শাহজাহান মুন্সি বলেন, জুয়েল এবং তার স্ত্রী আলেয়া বেগম কে ঘর থেকে পিটিয়ে বের করে দিয়েছে ওর মাকে ঘরে স্থান দেয়নি খাবার দেয়না এটা অমানবিক তিনি বলেন শুনেছি বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন কে নির্বাচনে জুয়েল টাকা দিয়ে সহযোগীতা করেছে বলে এর কোন বিচার সে করছে না।
কদমতলা কলেজের পিন্সিপাল বলেন জুয়েলের মা অত্যন্ত ভদ্র এবং ভাল বংশের মহিলা কিন্তু তার বড় ছেলের স্ত্রী অত্যন্ত জেদী মহিলা এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তি বর্গ এটা নিয়ে বহুবার শালিস করে