অদৃশ্য শক্তির কারনে ২ বছরেও দুদক মামলার অগ্রগতি নেই!
সাবেক রেলপথ মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ও ইউপি চেয়ারম্যান তকমা লাগিয়ে ভূমিহীন থেকে কোটিপতি মোশারেফ (পর্ব-৩)
এম শাহীন আলম :
গত ১ যুগের আগেও যার মাথা গোজার ঠাঁই ছিলোনা ভূমিহীন দারিদ্রতার গ্রাসে যার নুন আনতে পান্তা পুরাতো,তিন বেলা খাবারের অভাবে বর্তমান কাশিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারেফ এর মা ইউনিয়ন ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে ইউনিয়ন হতে চাল সংগ্রহ করতো এবং এলাকার কাশিনগর বাজারের ধান-মারাই মেইলে কাজ করে সাংসারিক চাহিদা পূরন করতো,জানা যায় এই মোশারেফ বিয়ে করার পরও বেকার ছিলেন এবং তার স্ত্রী সে সময়ে একটি স্বাস্থ্য-বিষয়ক এনজিও (পুষ্টিতে)মাঠ কর্মী হিসেবে কাজ করতেন, অভাবে অনাটনের সংসারে সেই সময়ে মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে প্রবাসে যাওয়ারও পরিকল্পনা করেন মোশারেফ,আর সেই মোশারেফ সাবেক রেলপথ মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তকমা লাগিয়ে বর্তমানে সে বিলাস বহুল বাড়ী,গাড়ী,ও কোটি টাকার মালিক।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায় এই মোশারেফ হোসেন ছাএ জীবনে জামাত শিবির এর একনিষ্ঠ সক্রিয় কর্মী ছিলেন,এবং ৮০ থেকে ৯০ দশকে চৌদ্দগ্রাম থানা শিবিরের জনপ্রিয় কর্মী এবং কাশিনগর ইউনিয়ন শিবিরের সাথী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন,তৎকালীন জামাত নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের অনুসারী শিবির নেতাদের সাথে তার রাজনৈতিক অন্তঃকোন্দল হলে সে তার নিজ অনুসারীদের নিয়ে জেলা নেতাদের নির্দেশে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মিটিং সমাবেশে অংশগ্রহণ করতেন, এরশাদ সরকারের আমলে একটি প্রোগ্রামে বেয়াদবি করার কারনে ছাএলীগ কর্মীরা তাকে বেধরক পিটিয়ে পা ভেঙে আহত করেন,তখন তার এলাকার কিছু লোক মানুষ হিসেবে দয়া দেখিয়ে তাকে চিকিৎসা করান, তৎকালীন মাইর খাওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে মোশারেফ আওয়ামীলীগের অঙ্গ-সংগঠনের নেতা কর্মীদের সাথে উঠা বসা করতে শুরু করেন,এই ভাবে তার জীবন যাএা চলতে থাকে,জানা যায় এই মোশারেফ ছোট বেলা থেকে অধিক বুদ্ধিমওা এবং টাউট প্রকৃতির লোক হওয়ার কারনে সে সময়ে আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের অতি অল্প সময়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, এবং এক সময়ে কাশিনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি খাইরুল আনাম তালুকদার সহ আরো বেশ কিছু নেতা তাকে বর্তমান এমপি মুজিবুল হকের কাছে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন,এই পরিচয়টাকে পুঁজি করে মোশারেফ হোসেন চিটার প্রকৃতি হওয়ার কারনে ধীরে ধীরে বিভিন্ন কৌশলে সাবেক রেলমন্ত্রী ও বর্তমান এমপি মজিবুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক সময়ে তার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিয়োযুক্ত হন, তার এলাকার মানুষের মুখে মুখে একটাই প্রশ্ন এতো কম সময়ে
মাএ কয়েক বছরের ব্যবধানে কোন এক আলাদিনের চেরাগ পেয়ে বিলাস বহুল বাড়ী,ফ্ল্যাট,গাড়ীর মালিক বনে গেলেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ১নং কাশিনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন।যাকে এলাকার মানুষ এক সময়ে “পোকা” মোশারেফ বলে ডাকতো।
সরেজমিনে গিয়ে আরো জানা যায়- এই মোশারেফ এর বোনও এক সময়ে অভাবের সংসারে তিন বেলা আহার জোগাতে রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করতো, সেই মোশারেফ বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার বদৌলতে গড়েছেন সম্পদের পাহার। চৌদ্দগ্রাম সংসদীয় আসনের এমপি মজিবুল হক এমপির হাত ধরে শিবির কর্মী হতে আওয়ামীলীগে যোগদান এবং সাবেক রেলপথমন্ত্রী মজিবুল হকের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন সময়ে রেলপথ মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে নামে বে নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ পূর্বক পরবর্তীতে কাশিনগর ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়- ২০১০ সালে মোশারফ ভূমিহীন হিসেবে ততকালীন এসিল্যান্ডে এর নিকট আবেদন করে সামান্য জমিতে বসতবাড়ি করে একটি ঠিকানা বন্দোবস্ত করার জন্য ( যার দলিল নং ২৭০৪/১০,সাব রেজিষ্টার,চৌদ্দগ্রাম কুমিল্লা ) যা এখনো তিনি দখলে যেতে পারেননি এবং এই জমির বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান, সেই সময়ে এসিল্যান্ডের দেওয়া জমিতে দখলে যেতে না পেরে পরবর্তীতে নিজেই জমি কিনে তার নিজ গ্রামে বিলাস বহুল বাড়ী নির্মাণ করেন, ইউপি চেয়ারম্যান মোশারেফ তার নিজ এলাকার লোকজন জানান, মাএ এক যুগ না যেতেই কি করে কোন আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন, কিভাবে যে এত দ্রুত টাকার মালিক বিলাস বহুল বাড়ী,প্রিমিও,এলিয়ন গাড়ী,বিলাস বহুল জীবনযাপন করছেন “পোঁকা” মিয়া আজকের মোশারেফ চেয়ারম্যান।
জানা যায় কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের প্রান-পুরুষ জন-নন্দিত গরীব ও মেহনতি মানুষের নেতার আর্শিবাদে ভাগ্যক্রমে ২০১৬ সালে সাবেক রেলপথমন্ত্রী মজিবুল হক এর দয়ায় ভোট বিহীন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, এই চেয়ারম্যান হওয়ার বদৌলতে শুরু হয় যে কোন উপায়ে টাকা কামানোসহ অবৈধ সম্পদ বাড়ানোর অপকর্ম। অনুসন্ধানে জানা যায়- সাবেক রেলমন্ত্রী মজিবুল হক মজিব এমপি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তার নাম ভাঙ্গিয়ে রেলওয়ে খালাসী পদ সহ একাধিক পদে চাকুরী দেবার কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এই মোশারেফ। চেয়ারম্যান ছাড়া টিকাদারী ব্যবসার নামে করেছেন ব্যাপক অনিয়ম যা এলাকায় দৃশ্যমান ,অবৈধভাবে কাকঁড়ীএবং ডাকাতিয়া খাল জবর-দখল করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকার মাটি বিক্রি করেন। যা এখনো খালের পাড়ে দৃশ্যমান। এছাড়াও বিভিন্ন পন্থায় অবৈধ ভাবে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়, তিনি তার ইউনিয়নের বারৈয়া গ্রামে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত করেছেন বিলাসবহুল বাড়ী-যার নাম করণ করেছেন চেয়ারম্যান বাড়ী।
এছাড়াও অনুসন্ধানে আরো জানা যায় মোশারেফ চেয়ারম্যান কুমিল্লা নগরীর নবাব ফয়জুনেচ্ছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মিলন কুঞ্জসহ কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি ফ্ল্যাট তা স্ত্রী ও আত্মীয়ের নামে কিনেছেন। শুধু কুমিল্লায় নয় রাজধানী ঢাকার মগ বাজারে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাটের মালিকও তিনি,জানা যায় গত কয়েক বছর ধরে তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছে। গত দশ বছর আগেও যার একটি বাইসাইকেল কেনার সামর্থ্য ছিলো না,তিনি বর্তমানে ক্রয় করে ব্যবহার করেন একটি প্রিমিও, একটি এলিয়ন এর মতো বিলাস বহুল গাড়ি, যে সব গাড়ির ম্যানটেইনেস খরচ মাসে লাখ টাকারও বেশি,
অনুসন্ধানে আরো জানা যায় তিনি নাকি মালয়েশিয়াতেও দ্বিতীয় বাসস্থান হিসেবে বাড়ী ক্রয় করে রেখেছেন। আর বিদেশ ভ্রমন তো তার কাছে কোন বিষয় না গত পাঁচ সাত বছরে তিনি এশিয়া,মধ্যপ্রাচ্য,ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমন করেছেন। বর্তমান চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেও তিনি সৌদি আরবে ওমরা হজ্বের নামে ১৪ দিন সফর করে আসছেন,তার এলাকার জনগনের প্রশ্ন একজন লোক সাধারনত বিদেশ ভ্রমন করতে গেলে বহু টাকার প্রয়োজন হয়, তিনি প্রতি বছরেই কয়েক মাস পর পর বিদেশ ভ্রমন করেন, একজন ইউপি চেয়ারম্যানের আয়ের উৎস কোথায়, চেয়ারম্যান হিসেবে ভাতা কত টাকা পান,জানা যায় তার ইউনিয়ন এলাকায় মদ ,জুয়ার স্পট ,অবৈধ মাটি কাটা ,অবৈধ ইট ভাটা থেকে তিনি মাসিক ভাবে বিভিন্ন উৎসবের নাম করে টাকা হাতিয়ে নেন, এছাড়া তার ইউনিয়ন এলাকায় গ্যাসে চালিত সিএনজি, ব্যাটারীচালিত অটো-রিক্সা,অবৈধ কাগজপত্র বিহীন ট্রাক্টর,ড্রামট্রাক সহ ছোট বড় বিভিন্ন পরিবহন থেকে লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে জিবি’র নামে চাঁদার টাকা যার বেশিভাগ মোশারেফ চেয়ারম্যান এর পকেটে আসে,এলাকায় বিচারের নামে অনিয়ম তো আছেই, অনুসন্ধানে জানা যায় টাকার জন্য এমন কোন অপকর্ম নেই যে, তিনি তা করেন না। তার পারিবারিক জীবনে জানা যায় এই মোশারেফ তার সহ-ধর্মীনিকে পটিয়ে ফুসলিয়ে তার শ্বশুর বাড়ীর অমতে অসামাজিক ভাবে বিয়ে করেন,যা তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তাকে জামাই হিসেবে মন থেকে মেনে নিতে চাননি বহু বছর ধরে, গোপনসূএে জানা যায় এই মোশারেফ এর অবৈধ লক্ষ লক্ষ টাকা তার স্ত্রী’র বড় ভাইদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ডিপোজিট করেন বলে জানা যায়, আরো জানা এই মোশারেফের বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমে লেখালেখি সহ দুদকে মামলা হওয়ার কারনে সে স্হানীয় সংবাদ কর্মীদের সাথে লিয়াজোঁ করে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরে,বর্তমানে এই মোশারেফ মিডিয়া বান্ধব চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত,সবচেয়ে চমকপ্রদ খবর হলো গোপন বিশ্বস্হ সূএে জানা যায় এই চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যদি দলীয় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নৌকার টিকেট পেতে কোন ক্রমে ব্যর্থ হন তাহলে তার দেশ ত্যাগ করারও পরিকল্পনা রয়েছে, তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দূর্নীতি দমন কমিশনে দুটি অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। যাহা দূর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় ঢাকা- স্মারক নং ০০.০১.০০০০.৫০৩.২৬.৬৭৮.১৯.৪৬৬৬১ তারিখ ০১/১২/২০১৯ খ্রিঃ এবং দূর্নীতি দমন কমিশন কুমিল্লা কার্যালয় স্মারক নং দুদক/সজেকা/৩৯/২০১৯/২৮৭৪ তারিখ ১৫/১২/২০১৯ খ্রিঃ ই/আর নং ৩৯/২০১৯ চলমান,
অনুসন্ধানে আরো জানা যায় দূর্নীতি দমন কমিশনের আইন-অনুযায়ী কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ কিংবা মামলা হওয়ার পর স্বল্প সময়ে সুরাহা কিংবা দোষীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও গত দুই বছরে কুমিল্লা দুদক কার্যালয় মোশারেফ কে একাধিক বার তলব করলেও কোন অদৃশ্য শক্তির কারনে মামলার সুরাহা কিংবা ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে, এই বিষয়ে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মামলাটির দ্রুত অগ্রগতির জন্য দূর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সু-দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ,
পরবর্তী অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য সহ নিউজের ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে।